Motivational Storyঅনুপ্রেরণাউচ্চশিক্ষা

ডোন্ট গিভ আপ

আজ শনিবার, সাধারণত সন্ধ্যাটা একটু ঘুরাঘুরি করে কাটাই। বিকেলে বের হই আর রাতে বাসায় ফিরি।কিন্তু আজ হলো উল্টোটা ,আজকে বাসা থেকে বের হলাম দুপুরে আর বাসায় ফিরলাম সন্ধার পরপরই ।বাসায় ফিরে চিন্তা করছিলাম একটা মুভি দেখব।অনলাইনে দেখলাম অভিষেক বচ্চনের নতুন মুভি এসেছে “বব বিশ্বাস”, পরিচালক হলেন সুজয় ,যিনি কাহানি মুভিটা পরিচালনা করেছিলেন। তাই এই মুভিটা দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। মুভি দেখব কিন্তু সাঠে পপকর্ন থাকবে না সেটা কি করে হয়?!!! আমার বাসায় কর্ন থাকে প্যাকেটে যা হালকা তেল দিয়ে ভেজে নিতে হয়। তাই রান্নঘরে যেয়ে পপকর্ন ভাজলাম একবাটি (পড়ুন গামলা) । পপকর্ন আর ৭আপ নিয়ে বসলাম ল্যাপটপের সামনে। কিন্তু কি ভেবে যেনো পপকর্ণ চাবাতে চাবাতে ভাবলাম একটা লেখা লিখে ফেলি। কিন্তু কি নিয়ে লিখবো?! প্রথমে ভাবলাম ভ্রমন কাহিনী লিখে ফেলি একটা কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম ভিন্নধর্মী একটা লেখা লেখা যাক! একটি জীবনের গল্পঃ।কিন্তু কার জীবনের গল্পঃ লিখবো যেটা অন্যকে অনুপ্রাণিত করবে! তখনই মনে পরলো একজনের কথা। তো যাই হোক আজকে যার জীবনের একটি গল্পঃ লিখবো তার নামটা অপ্রকাশিত থাকবে। এতটুকু পড়ে অনেকেই ভাবতে পারেন কারো ডেইলি ডায়েরীর পাতা পড়ছেন কিন্তু না সত্যিই আমি কারো ডায়েরী লিখছি না আসলে আমিতো কোনো লেখক না তাই ছন্দ হারা এবং অপ্রাসঙ্গিক ভাষায় লেখাটা পরিপূর্ণ থাকবে।

হাত টা অনেক ব্যাথা করছে,অনেক দিন পর কলম ধরলাম এবং বাংলায় লিখছি। অনেকে একটু ভাব নিয়ে বলে বাংলায় লেখার প্র্যাকটিস না থাকলে নাকি বানান ভুলে যায়,লিখতে পারে না কিন্তু আমার এখনো আশা করি ৯৫ শতাংশ বানান শুদ্ধ হবে বাকিটা সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ওহ কি নিয়ে যেনো লিখবো বলেছিলাম?! মনে পড়েছে একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্পঃ লিখবো, হা হা হা

আমাদের এই গ্রুপটা যেহেতু ইউরোপে পড়াশুনা বিষয়ক তথ্য আদান প্রদান সম্পর্কিত তাই আজকে আপনাদের বলব একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের ইউরোপের মাটিতে হার না মানা গল্পঃ। হাতটা খুব ব্যাথা করছে আগের তুলনায় আহ। কি আর করার লিখতে যেহেতু বসেছি আজ লিখেই উঠবো ইনশাল্লাহ। মোবাইলটা এরো প্লেন মুডে রেখে নেই কারণ আমার আবার লেখার সময় কোনরকম ডিস্টার্ব ভালো লাগে না। যাইহোক বেশিমাত্রায় কাবলামো হচ্ছে লেখার মধ্যে তাই প্রসঙ্গে আসতে হবে।

ছেলেটার নাম ধরুন… কি দেয়া যায়??ওকে ছেলেটার নাম “ছেলেটা” ? ছেলেটা এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ভর্তি হলো মাঝারী খরচের একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ই ই ই তে। ১ বছর পড়ার পর ছেলেটা শুনলো যে জার্মানিতে নাকি ১৩ ইয়ার্স এডুকেশন দিয়েই প্রায় বিনা খরচে পড়াশুনা করা যায়। এটা শুনেতো মধ্যোবিত্ত ছেলেটার মনে একটা স্বস্তির ভাব আসলো। ছেলেটা ভাবলো ঢাকায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যেই টাকা খরচ হবে সেই টাকা দিয়ে একবারে জার্মানিতে যেতে পারলে আর কোনো সমস্যা নেই। যেইভাবা সেই কাজ। সে তার ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করলো। সে তখন খোঁজ করতে লাগলো কোথায় কোন এজেন্সি জার্মানিতে ভিসার প্রসেসিং করে। তো এমনি ভেবে ঘুরতে ঘুরতে সে একটা এজেন্সিতে এসে শুনতে পেলো যে জার্মানির পাশাপাশি অস্ট্রিয়া তেও বিনা টাকায় পড়া যায় এবং সেখানে কোনো ব্লক অ্যাকাউন্টে টাকা দেখানো লাগবে না। এটা শুনে ছেলেটা পুরোপুরি পটে গেলো। সে তখন জার্মানি বাদ দিতে অস্ট্রিয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। এবং ব্লক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা লাগবে না জেনে পরিবার থেকেও কোনো আপত্তি করলো না। এজেন্সির লোক ছেলেটাকে বললো জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ শিখার জন্য। জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ শিখার জন্য ছেলেটা গোথে ইনস্টিটিউট ঢাকাতে ভর্তি হলো। অপরদিকে এজেন্সি তার অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং শুরু করে দিলো। সালটা ২০১৫ ছিল এবং তখন অস্ট্রিয়া খুবই মন্থর গতিতে অফার লেটার দিত।

যাইহোক ছেলেটা ২-৩ দিন গথ ইনস্টিটিউটে ক্লাস করার পর একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো। মেয়েটিও সেখানে জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করছিলো। ১ মাস যাওয়ার পর দুজনের মধ্যে ভাব আদান প্রদান হলো। অন্য দিকে সপ্তাহ যায় মাস যায় কিন্তু অস্ট্রিয়ায় প্রসেস এগুচ্ছে না। এজেন্সিতে যোগাযোগ করা হলে তারা বললো যে ২-৩ মাসের মধ্যে অফার লেটার পেয়ে যাবে। এইভাবে ৮ মাস যাওয়ার পর ছেলেটি অফার লেটার পেলো। ততদিনে ছেলেটির প্রেম অনেক দূর গড়িয়েছে। অফার লেটার পাওয়ার পর ছেলেটি ভাবলো যাক ভালই হলো, একবার অস্ট্রিয়া যেতে পারলে সে তার প্রেয়সীকে বিয়ে করে অস্ট্রিয়া নিয়ে যাবে। দুজনে মিলে অনেক স্বপ্ন বুনছে কখন কি করবে ,কোন কোন দেশ ঘুরবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা । এভাবেই স্বপ্ন বুনতে বুনতে সময় কাটছে দুজনের অন্যদিকে যে জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য গেথে ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলো তার কোনো খবর নেই ।দুজন মিলে ভাবলো অস্ট্রিয়ায় গেলেই তখন শিখে নিব।

ওইদিকে দিল্লিতে অস্ট্রিয়া এম্বাসিতে ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে এজেন্সি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্টের আর কোনো খবর নেই। ক্রমেই ছেলেটা অধৈর্য হতে লাগলো এবং হতাশার মধ্যে পরে গেল। অন্যদিকে তার প্রেমিকা তাকে বিয়ের কথা বলতে লাগলো কেননা তার বাসায় বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ছেলেটার অবস্থা খুবই নাজুক কেননা তার সকল স্বপ্নই এই অস্ট্রিয়া র ওপর ভিত্তি করে গড়া। এইভাবে পেরিয়েছে আরো ২-৩ মাস কিন্তু এম্বাসির অ্যাপয়েনমেন্ট যেনো সোনার হরিণ।মিলছে না তো মিলছেই না। হঠাৎ করে ছেলেটার তার প্রেমিকার সঙ্গে ব্রেকআপ হলো। তীব্র মানসিক অশান্তি নিয়ে সময় কাটছে ছেলেটার। কেটে গেলো আরও ১ মাস। ছেলেটা বুঝলো যে অস্ট্রিয়ায় তার কিছুই হবে না এবং সে ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করেনি এই সময়টায়। সে মোটামুটি এই কূল এবং ওই কূল দুই কূল ই হারানোর পথে। সে বিকল্প অনেক দেশই বিবেচনা করতে লাগলো। ঘাটতে ঘাটতে সে দেখলো ইস্ট ইউরোপের কোনো একটা দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবে এবং নেক্সট ইনটেক হচ্ছে জানুয়ারি ২০১৭। সময় নষ্ট না করে ছেলেটা একটা এজেন্সিতে ফাইল দিয়ে দিলো এবং কিছুদিনের মধ্যে অফার লেটার পেয়ে গেলো। ওই ইউনিভার্সিটি থেকেই এম্বাসিতে অ্যাপয়েনমেন্ট বুক করে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ছেলেটা ইন্ডিয়াতে অবস্থিত সেই এম্বাসিতে ইন্টারভিউ দিতে গেলো এবং তাকে প্রায় ডজন খানেক প্রশ্ন করা হলো এবং সে কেনো দেশের ই ই ই রেখে ওই দেশে যাবে পড়াশুনার জন্য? ছেলেটা খুব ভালো ভাবেই ইন্টারভিউ দিলো এবং ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা পেয়ে গেলো। ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আর পর পরিবারের সঙ্গে বসলো পরামর্শ করার জন্য কিভাবে সে ওই দেশে সর্ভাইব করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিবার থেকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলো যে যেই ১ বছরের টিউশন ফিস দিয়েছে তার পরে আর কোনো টিউশন ফিস দিতে পারবে না এবং ছেলেটাকে নিজেরটা নিজেরই ম্যানেজ করতে হবে। ছেলেটা ৬ মাসের থাকা খাওয়া খরচ বাবদ কিছু হ্যান্ড ক্যাশ নিয়ে উড়াল দিলো স্বপ্নের ইউরোপে। বলে রাখা ভালো যে দেশে সে গেলো সেখানে তার মাসিক হোস্টেল ফিস হচ্ছে ৬০ ইউরো এবং খাওয়ায় খরচ হবে ৬০-৭০ ইউরো সব মিলিয়ে ১৩০-১৪০ ইউরো মাসিক খরচ।

ভূমিকা টা মনে হয় বেশি বড় হয়ে গেলো!!!

নির্ধারিত সময়ে ছেলেটা পৌঁছাল সেই দেশে। সবকিছুই নতুন বিশেষ করে আবহাওয়া টা খুবি ঠান্ডা এবং তুষার পরে অনেক। সবকিছুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ছেলে টা কিন্তু খুব কঠিন মন হচ্ছে সব। ডরমিটরি তে দেখলো আরো অনেক বাংলাদেশী স্টুডেন্ট আছে এবং তার ক্লাসেই ৩-৪ জন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট রয়েছে। এরই মাঝে তুষার পরে সব সাদা হয়ে গেলো ,কি একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাঃ। ছেলেটি মাসিক বস কার্ড করলো এবং ক্লাসে যাওয়া শুরু করলো নিয়মিত। টিচার রা খুবই ভালো লেকচার দিচ্ছেন কেয়ার করছেন সবকিছু মিলিয়ে ভালই লাগছে ছেলেটার। ১৫-২০ দিন যাওয়ার পর দেখাগেলো বাংলাদেশ থেকে আসা অধিকাংশ স্টুডেন্টরা চলে যাচ্ছে অনন্যা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে উন্নত জীবনের আশায়। ব্যাপারটা ছেলেটাকে ভীষন ভাবে নাড়া দিল কেনোনা সে দেশ থেকে ৬ মাসের চলার মতো টাকা নিয়ে এসেছে এবং তার ফ্যামিলি থেকে আর কোনো টাকা দিবে না। আবার তার কাজের অনুমতি পেতে পেতে আরো কয়েকমাস সময় লাগবে সুতরাং তার বসে বসেই কাটাতে হবে এই কয়েকমাস। তো ছেলে টিও চিন্তা করলো সেও যদি চলে যায় তাহলে কেমন হবে?! ছেলেটিও খোঁজ নিতে লাগলো কয়েক জায়গায় কিভাবে কি করা যায় এবং কোন দেশে গেলে ভালো হবে। ভাবলো গেলে একরকম ভালই হবে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে এবং তার আর কোনো সমস্যা থাকবে না এবং সে পরিবারকে টাকা পাঠাতে পারবে।

কিন্তু সে যখন আবার ক্লাসে যায় তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে পড়াশুনা করতে এসে যদি পড়াশুনা না করে তাহলে কেমন হবে? পুরো দোটানায় পরে গেছে ছেলেটা। তখন সে তার ক্লাসের অন্য ২-৩ জন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এর সঙ্গে কথা বললো এবং জানতে চাইলো তাদের কি পরিকল্পনা? যখন সে জানতে পারলো যে তার ক্লাসমেটরা এখানেই থাকবে এবং পড়াশুনা শেষ করবে তখন সে সিদ্ধান্ত নিলো যে যতো যাইহোক সে এখানে থেকেই পড়াশুনা শেষ করবে। ২ মাস পর সে TRP er জন্য আবেদন করলো এবং তার ১ মাস পর সে TRP কার্ড হাতে পেলো। ওইদিকে সেমেস্টার ও প্রায় শেষের পথে সুতরাং সে ভাবলো পরীক্ষা শেষ হলেই সে সমার ভেকেশনের বন্ধে কাজ করবে। ছেলেটি যেই দেশে গিয়েছে সেখানে ইংলিশ স্পিকার নেই বললেই চলে এবং ফরেইনারদের জন্য কাজের সুযোগ খুবই কম ছিলো তখন। ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করে সে জব হান্টিংয়ে বের হলো কিন্তু যেখানেই যায় সেখানেই বলে যে সামেরের জবের জন্য লোক নিয়ে ফেলেছে ।অন্যদিকে তার পকেটের অবস্থা খুবই খারাপ সে সর্বোচ্চ আর ১ মাস চলতে পারবে। তীব্র মানসিক অশান্তিতে ভুগছে সে। ফ্যামিলি থেকেও টাকা আনতে পারছে না আবার জব পাচ্ছে না সবমিলিয়ে খুবই শোচনীয় অবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো যারা অন্যদেশে চলে গিয়েছিল তারা একেক জন প্রতি মাসে ১২০০-১৫০০ ইউরো ইনকাম করছে। এগুলো শুনে ছেলেটি চিন্তা করতে লাগলো সে কি না যেয়ে ভুল করলো? ১ মাস কেটে গেল আরো, তার পকেট এখন পুরো ফাঁকা। এখন সে হোস্টেল ফিস দিবে কিভাবে আর খাবেই বা কি ভাবে? তীব্র মানসিক টেনশনে টিকতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো যে সে আর থাকবে না সে চলে যাবে অন্য দেশে। কিন্তু রাতে যখন চোখ বন্ধ করে তখন তার সামনে ভেসে ওঠে ডিগ্রী শেষ করার স্বপ্ন ।এইভাবে ২-১ দিন যাওয়ার পর সে তার সিদ্ধান্তের কথা তার ক্লাসমেট দের জানালো তার ক্লাসমেট রা তাকে বললো যে ভাই আপনি যাবেন না আমরা সবাই মিলে মিশে থাকবো , খাবো আপনি টাকা নিয়ে টেনশন করবেন না। যখন জব পাবেন তখন এই কষ্ট ভুলে যাবেন। এরকম ভরসা পেয়ে ছেলেটি চিন্তা করলো সে আর কোথাও যাবেনা। কিন্তু তার পক্ষে অন্যের টাকায় চলা সম্ভব নয় তাই সে অনেক কষ্ট করে দেশ থেকে তার বন্ধুর মাধ্যমে কিছু টাকা লোন করে নিয়ে আসলো যাতে সে কয়েকমাস চলতে পারে কেননা তখন তার টিউশন ফিস দেয়া লাগছিল না যেহেতু সে ১ বছরের টিউশন ফিস দিয়ে এসেছে। পরবর্তী সেমিস্টার শুরু হবে সেপ্টেম্বর মাসে। সে তার জব হান্টিং চালিয়ে যেতে লাগলো এবং এরিমধ্যে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। ২-১ টা জবের জন্য তাকে ট্রায়ালে ডাকা হলো (রেস্টরেন্টগুলোতে) । এরমধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সে একটা জব পেল সপ্তাহে ৪ দিন সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। সে বেজায় খুশি হলো একটা জব পেয়ে ভাবলো তার কষ্টের দিনগুলো বুঝি শেষ হলো। ২ সপ্তাহ কাজ করার পর মালিকের ফোন এলো একদিন ।মালিক বললো যে তার রেস্টুরেন্টে পুলিশ এসে রেইড চালিয়েছিল এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রোডাক্ট পাওয়ায় তার রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স বাতিল করে রেস্টুরেন্টে সিলগালা করে দিয়েছে। এটা শুনে ছেলেটার অবস্থা হলো মরার ওপর খাড়ার চাপ। এখন কি হবে ? সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে? ২০১৭ শেষ হয়ে ২০১৮ সাল এলো। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল কিন্তু লেখাপড়ায় যেনো তার মন বসছে না। ঠিক তখনই শুনতে পেলো যে তার হোস্টেলের একটা ছেলে একটা পিজ্জা শপে কাজ পেয়েছে এবং কোনরকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই। খবরটা শুনে ডরমিটরি তে যারা ছিলো তারা সবাই খুবই খুশি হলো কেননা অবশেষে এখনতো পার্মানেন্ট একটা কন্ট্রাক্ট জব পেলো! এবং যেই পিজ্জা শপে জয়েন করেছে ওই পিজ্জা শপের অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে পুরো দেশ ব্যাপী। ছেলেটিও ভাবলো যে সেমিস্টারটা শেষ করেই ওই শপে যেয়ে সিভি ড্রপ করবে। সে ভাবলো পকেট যা কানাকড়ি আছে টা দিয়ে কোনো মতে সেমিস্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারলেই হবে। যখন সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হলো তখন ছেলেটির মাথায় আসলো যে এখন তো নতুন সেমিস্টার শুরু হবে এবং তাকে তো টিউশন ফিস দিতে হবে!!!!তার ত শুধু থাকা খাওয়ায় খরচ ম্যানেজ করলে হবে না। ছেলেটি পরীক্ষা শেষ করে সোজা চলে গেলো ওই পিজ্জা শপে সিভি ড্রপ করার জন্য। এবং রিকুয়েস্ট করলো জবের জন্য । ওই পিজ্জা শপটাও লোক খুঁজছিল তাদের সামারের চাপ সামলানোর জন্য। যেহেতু অলরেডী বাংলাদেশী একটি ছেলে সেখানে ভালো ভাবেই জব করছে তাই তারা ভাবলো যে ছেলেটাকে জবটা দিবে। তারা ছেলেটাকে ডাকলো এবং বললো যে তাদের সেখানে সে জব করতে পারবে যদি সে ফুলটাইম মাসে ১৫ দিন ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে পারে( যদিও অনুমতি মাসে ৮০ ঘণ্টার) ছেলেটি কোনো কিছু বিবেচনা না করেই হা বলে দিলো। তার বেতন নির্ধারিত হলো ৪৬৫ ইউরো মাসিক। ছেলেটি তখন তার আশে পাশের সবর কাছ থেকে টিউশন ফিস ম্যানেজ করে পেইড করে দিলো। এদিকে সে ক্লাস শুরু করতে গিয়ে দেখলো তার ক্লাস সপ্তাহে ৫ দিন কিন্তু তার কাজ মাসে ১৫ দিন সুতরাং কোনোভাবেই তার পক্ষে ক্লাস করা সম্ভব না। তাই সে তার অন্য ক্লাসমেটদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ক্লাস সপ্তাহে ৩ দিন করার জন্য ডিপার্টমেন্টে আবেদন করলো। বলো রাখা ভালো যে তার ক্লাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের সংখ্যা কমতে কমতে ৫-৬ জনে নেমে এসেছে। তাই তাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ডিং ছিলো এবং অন্যরাও জব খুঁজছিল তাই সবার সুবিধার কথা চিন্তা করেই সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাসের আবেদন করা হলো এবং এপ্রুভ ড হলো । এবং ৩ দিন সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্তও ক্লাস থাকতো। আপাতত সমস্যাটার একটা সমাধান হলো। কাজে যাওয়ার পর প্রথমদিকে ছেলেটির মনে হলো এটা কোথায় আসলাম।

তার কাছে সবকিছুই নতুন নতুন । সে বানাতে পারে না পিজ্জা ,এমনকি বানাতে পরে না পিৎজার ডো। কিন্তু তার শেফ তাকে হতে ধরে সব শিখিয়ে দিলো এবং অনেক হেল্প করতে লাগলো কাজের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য। সে যেখানে কাজ করতো সেই পিজ্জা শপটি ছিলো অনেক ব্যাস্ত। বিশেষ করে উইকেন্ডে দম ফেলানোর সময় ছিলো না। সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস আবার বাকি দিনগুলোর অধিকাংশ সময়ে কাজ করে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এবং বাসায় ফিরে রান্না করছে, এসাইনমেন্ট করছে তার কাছে মনে হচ্ছে যেনো তার জীবনটা পুরোটাই যান্ত্রিক। বেতন পাচ্ছে ৪৬৫ ইউরো , হোস্টেল ফিস দিচ্ছে ৬০ ইউরো, খাবার খরচ হচ্ছে ৭০-৮০ ইউরো আর বাকিটা ধার শোধ করছে। ছেলেটি ভাবলো নেক্সট সেমেস্টার এর টিউশন ফিস দেয়ার জন্য সেতো সেভিংস করতে পারছে না তাই কিছুটা বিচলিত হলো। তবে সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে পুরো দমে এবং দেখতে না দেখতে পরীক্ষা এবং আমার দুটোই চলে আসলো। পরীক্ষা দিলো এবং ভালোভাবেই পাস করলো সব সাবজেক্টে । সামারের সময়টা যেহেতু খুব বিজি যায় তাই রেস্টুরেন্টে থেকে তাকে অফার করা হলো সে যদি অন্য আরেকটা ব্রাঞ্চে জব করে দিন ১৪ ঘণ্টা করে (যেটা আরো বেশি বিজি ) তাহলে তাকে দিন ৬০ ইউরো করে দিবে। এই অফার পেয়ে ছেলেটা রীতিমতো আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলো এবং সঙ্গে সঙ্গে অফারটা লুফে নিলো। পুরো সামারের ২,৫ মাস সে মাসে ২৪-২৫ দিন কাজ করলো এবং প্রায় ২৫০০-২৮০০ ইউরো জমিয়ে ফেললো।এভাবে করে দেখা dmgelo যে তার টিউশন ফিস মাংয়ে হিয়ে গেলো।যদিও ১৪ ঘণ্টা পিজ্জা শপে কাজ করা অতটা সহজ ছিল না কিন্তু লেখাপড়ার জন্য, নিজের স্বপ্ন বাস্তবয়নের জন্য ওই কষ্টটা তাকে করতেই হতো। পিজ্জা স্ট্রেসিংয়ের জন্য অনেক বল প্রয়েগ করতে হয় যা আপনার সোল্ডারে অনেক পেইন দিবে, আবার ব্যাক পেইন। কিন্তু কোনো কিছুই ছেলেটাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। সামার ভেকেশন শেষ হলো, ছেলেটির ও ওই হেক্টিক কাজের অবসান হলো। ভেকেশনের পর সে মালিকের সাথী কথা বলে তার কাজটাকে পার্ট টাইম করে নিলো শুধু উইকেন্ডে এবং এই আশ্বাস পেলো যে পরবর্তী ভাকেশনেও সে ফুলটাইম কাজ করতে পারবে। ওই টাকা থেকে সে তার সেমেস্টার ফিশ দিলো বাকি যা ধার ছিলো পরিশোধ করল এবং কিছু সেভিংস করলো যাতে কোনো বিপদে পড়লে খরচ করতে পারে। এভাবে করে সে পার্ট টাইম জব মাসিক ৩২০ ইউরো করে পেতে লাগলো আবার লেখাপড়াতেও আগের চেয়ে বেশি সময় দিতে পারছে। ছেলেটি নেক্সট ভ্যাকেশন গুলোকেও কাজে লাগাতে লাগলো।

দেখতে দেখতে ৩ বছর শেষ হয়ে গেলো আর ১ টি সেমেস্টার বাকি তার। থিসিস করতে হবে এবার তাকে তাই অনেক প্রেসার সুতরাং তাকে সব কিছু থেকে বিরত থেকে শুধুমাত্র থিসিস এই মনোনিবেশ করতে হবে তাই সে মালিকের সঙ্গে কথা বলে ২ মাসের জন্য কাজ থেকে লাইভ নিলো। এরই মধ্যে করোনা মহামারী চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো তাই সবকিছুই বন্ধ সুতরাং সে আরো মনোযোগের সঙ্গে তার থিসিস করতে লাগল। প্রি ডিফেন্সের সময় তার প্রফেসর তাকে কিছু জিনিষ পরিবর্তন করতে বললেন তাই সে সবকিছু পুনরায় চেঞ্জ করলো এবং মডিফাই করলো। থিসিসের ডিফেন্সের ডেট পেলো এবং ডিফেন্সের দিন সে কিছুটা নার্ভাস ছিলো বটে কিন্তু সে তার ডিফেন্সের মাধ্যমে প্রফেসরদের থাকে বাহবা পেলো। থিসিসের রেজাল্ট আসলো ২-৩ দিন পর এবং সে মোটা মুটি খুবি ভালো স্কোর করলো এবং তার থিসিস অ্যাপ্রভেড হলো। ছেলেটি তার বন্ধুদের সামনে তেমন একটা উচ্ছাস প্রকাশ করেনি তখন কিন্তু যখন রাতের বেলা চোখ বুঝলো সে যেন টাইম ট্রাভেল করে সেই জানুয়ারি ২০১৭ এর দিনগুলোতে ফিরে গেলো। সে ক্রমাগত সৃতির পাতা হাত্রাচ্ছে এবং তার কাছে মনে হচ্ছিল যেন এইতো সেদিন সে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে এয়ারপর্ট এ এসে পৌঁছাল এবং যখন বাহিরে বের হলো দেখতে পেলো পুরো শহর টা যেন সাদা চাদরে ঢাকা। নিজের অজান্তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো ছেলেটা সে টেরি পেলো না। ঘুম ভাঙলো আলার্মে র শব্দে । ঘুম থেকে উঠে দেখলো আকাশে মেঘ করেছে এবং মৃদু বাতাস বইছে। এককাপ কফি হাতে নিয়ে কাঁচের জানালাটা একটানে খুলে তার মুখটা বাহিরের দিকে দিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এবং তার কাছে মনে হচ্ছে যেন একটা ভারী জিনিস তার কাধ থেকে নেমে গেছে।

১ মাস পর সামার করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে ইউনিভার্সিটি থেকে কনভোকেশনের তারিখ দিয়ে দিল। কনভোকেশন উপলক্ষে ছেলেটা নতুন সুট কিনলো এবং ইউনিভার্সিটি থেকে গাউন নিয়ে আসলো। কনভকেশন এর দিন ছেলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করলো এবং তারপর রেডি হতে আয়নায় অন্তত ১০ বার নিজের দিকে তাকালো নতুন সুট এবং গাউন থেকে খুব মানিয়েছে। এমন একটা দিনের জন্যইতো কত ত্যাগ তিতিক্ষা। নির্ধারিত সময়েই ছেলেটি ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছাল সঙ্গে তার ক্লাসমেট যারা এতদিনে ভাইয়ের স্থান দখল করে নিয়েছে তার অন্তরে। পুরো ক্যাম্পাস যেনো আজ এক বর্ণিল সাজে সেজেছে, আরো শত শত স্টুডেন্ট এবং গার্জিয়ান এর উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সবাই পর্যায়ক্রমে সার্টিফিকেট গ্রহণ করছে রেক্টরের কাছ থেকে । ছেলেটির ও সিরিয়াল এলো এবং সেও রেকটরের কাছ থেকে সার্টিিকেট নিলো। তারপর তারা একে একে ছবি তুলতে লাগলো ডিপার্টমেন্টে হেড ,ইন্টারন্যাশনাল অফিসার যিনি কি সর্বদা সাহায্য করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের। এরপর তারা গ্রুপ বেধে চলে আসলো বাহিরে ছবি তুলবে বলে কিন্তু একি? বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তাদের আজ রুখবে কে? সবাই নেমে পরলো বৃষ্টির মাঝে । একেজন একেজণ একেক পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। ফটোগ্রাফার ছেলেটাকে বললো মাথার ক্যাপ টা উপরে ছুঁড়ে দিয়ে একটা লাফ দেয়ার জন্য। ছেলেটি ক্যাপ টা হতে নিয়ে উপরের দিকে যেই না ছুড়বে তখন যেন বৃষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো। ছেলেটি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো এবং নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে যেন বৃষ্টির ফোঁটা আনন্দ অশ্রু হয়ে ঝরছে এবং সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তার পরলোকগত মমতাময়ী মা…

সময় যেনো থমকে গেলো কিছুটা…পরক্ষণেই ফটোগ্রাফারের “জাম্প” শব্দে আবেগের ঘোর কেটে গেলো ছেলেটির….

ফেসবুক মন্তব্য
Rudro Ahmed
Latest posts by Rudro Ahmed (see all)
 
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − ten =

Upcoming Events