আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ পর্ব-১
———————–
একান্তই নিজের কিছু কথা বলবো। কথাগুলো সহস্র দুর্বলতার সঙ্গে তীব্র আত্নবিশ্বাসের সংমিশ্রণে সাঁজানো এক টুকরো সফলতার গল্পগাঁথা।
সকলের পড়ার দরকার নেই। মূলত বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি, ইস.স্টাডিজ ও থিওলজি রিলেটেড বিষয়সমূহে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য আমার লেখা।
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ‘আইন’ পড়বো, ল’ইয়ার/জাজ হবো। দাখিলে (২০০৮) সাইন্স পড়েছি। ফিজিক্স-ক্যামিস্ট্রিতে A+ পেলেও অংকে আমার মরণদশা। আলিমে (২০১০) ‘আর্টস্’ নিলাম। GPA-5 পাবার মত ছাত্র ছিলামনা হয়তো, এজন্য কোনোটাতেই পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করা হলোনা নানা কারণে। ‘ফোকাস’ গাইড এবং ‘কারেন্ট আ্যফেয়ার্স’-ই ছিল আমার ‘অন্ধের যষ্টি’। প্রস্তুতি ভাল না থাকায় ঢাবি-তে ফর্ম উঠাইনি। খামোখা টাকা নষ্ট করে কি ফায়দা।
আল্লাহর মেহেরবাণীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিট পজিশন ২২ তম হলো। যথারীতি ভর্তির সমস্ত প্রস্তুতি সহ ভাইভা দিলাম। ভাইভার পর বের হয়ে শুনলাম চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওয়েটিং লিস্ট’- এ আছি। ইবি-তে ভর্তির সমগ্র ইচ্ছেকে মেইন গেটে কবর দিয়ে ছুটলাম রাজশাহীর পথে।
কোচিং না করলেও, প্রস্তুতি ভাল না হলেও আমার সুতীব্র আত্মবিশ্বাস ছিল ‘আমি বাংলাদেশের কোনো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো ইনশাআল্লাহ্’। দীর্ঘ একমাস ওয়েট করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হলাম। তৃতীয় বর্ষে সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশে পড়তে যাবো। উল্লেখ্য, সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্তও ভাবতাম অনার্স শেষ করে আইন পড়বো।
২০১৫ সালে তুরস্কে পিএইচডি গবেষণারত এক ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘Higher Study Seminar’-এ এলেন আলোচক হিসেবে। যথেষ্ট উৎসাহ পেলাম সেমিনার থেকে। IELTS নামক যমদূতের নামটি উনি বারবার উচ্চারণ করছিলেন। রুমে ফিরেই পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার স্টাডি রিলেটেড সাবজেক্ট সমূহে আবেদনের শর্ত ও নিয়মাবলি খুঁজতে লাগলাম।
যেখানেই আবেদন করতে যাই, কিছু দেশ (সৌদি, মিশর, তুরস্ক….) ব্যতীত অধিকাংশই দেখি IELTS চায়। খুব জিদ চেপে গেল মাথায়। পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কোনো কোর্স না করেই অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা শেষ করে পরের দিনই British Council এর রাজশাহী শাখায় সরাসরি IELTS-এ ভর্তি হলাম। অনেকেই টিপ্পনী কাটতো, আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কেউবা ‘ইংলিশম্যান’ বলে তাচ্ছিল্য করতো। আহত হতাম, কিন্তু সিদ্ধান্তে স্থির ছিলাম।
৪ মাস পর সেখানেই টেস্ট দিলাম। আমার তখনও ল্যাপটপ ছিলনা। বারবার ‘হ্যাং’ হওয়া কমদামী Symphony মোবাইলটাতেই Cambridge Series এর ‘Listening’গুলো প্র্যাকটিস করতাম। Speaking এর জন্য কোনো কোর্স করিনি, আমেরিকা ফেরত ক্যাম্পাসের এক ফ্রেন্ডের সাথে বিনোদপুর বাজারে (ক্যাম্পাসের পাশে) আড্ডা দিতাম আর ইংরেজী বলতাম। ফাজলামো, দুষ্টুমি বাঁদরামি সবই আমরা দু’জন ইংরেজিতে করতাম।
রেজাল্টের দিন কোচিংয়ের সহপাঠিনী ক্যাম্পাসের এক বড় আপুকে বললাম, আমি মোবাইল দিয়ে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছিনা, আপনি একটু আমার স্কোরটা দেখে জানান প্লিজ! উনি আমার রেজাল্টের Screenshot পাঠালেন। আলহামদুলিল্লাহ্, সার্বিক বিচারে ভাল না হলেও আমার Skill এর বিচারে স্কোর একেবারে মন্দ হয়নি।
(২য় পর্বে সমাপ্য)
- আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ ২য় ও শেষ পর্ব - December 6, 2019
- আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ পর্ব-১ - December 3, 2019