ইতালিউচ্চশিক্ষা

ইতালিতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন এবং কঠিন বাস্তবতা, ২০১৭-১৮ ( পর্ব-০১)

Last updated on June 3rd, 2020 at 08:02 pm

ইউরোপে পড়ালেখার ইচ্ছা বর্তমানে কম বেশি সবারই আছে। আর ইউকে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডে উচ্চ টিউশন আরোপিত হওয়ার ফলে ইতালি খুব দ্রুতই সবার পছন্দের তালিকায় চলে আসে। ইতালি পছন্দ করার অন্যতম একটা কারণ হলো ইতালিতে Developing Countries দের জন্য রিজিওনাল স্কলারশিপ নামের একটা স্কলারশিপ আছে যেটা পাওয়া আসলে বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন কিছু ছিলো না। মোটামুটি থাকা, খাওয়া ও পড়াশেনা টা চালিয়ে নেওয়ার মত টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের সব পথ রুদ্ধ করে দিলাম! জানতে চান কিভাবে করলাম??? তাহলে পড়তে থাকেন…
১। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের সবাই যে সাতারে চ্যাম্পিয়ন হবে সেটাই স্বাভাবিক (তারপরও কিভাবে যেন মাইকেল ফেলপস অলিম্পিকে সোনা জিতে যায়!!)। তাই ,পদ্মার ইলিশের মত ঝাকে ঝাকে বাংলাদেশি সুমুদ্র পথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার প্লান করে ফেলল। শুধু প্লান না, Statics বলে ২০১৫ এর জানুয়ারী থেকে ২০১৭ এর জুন পর্যন্ত ৯৩০০০ অবৈধ বাংলাদেশী লিবিয়া থেকে সমুদ্র পথে ইতালি গিয়েছে !! ইতালি এবং ইউরোপ বাংলাদেশকে বারংবার সর্তক করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ কর্ণপাত করে নাই, ফলাফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে।
এবার আসুন ইতালিতে আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু আলোকপাত করি…
গত বছরই ( ২০১৬) ইতালি বাংলাদেশীদের জন্য একটা কঠিন ফিল্টার মেশিন বসিয়ে দিয়েছে। যেটা বেশির ভাগ বাংলাদেশি স্টুডেন্টের কাছে এখনো একটা আতংকের নাম ! সেটা হলো IELTS. ইতালিতে এখন ভিসার আবেদন করার জন্যই নুন্যতম IELTS ৬.০ থাকতে হবে, এর কম হলে আপনি আপ্লাই-ই করতে পারবেন না যতই ভার্সিটি থেকে আডমিশন পান না কেন! এই স্টেজ পার হলেও আপনাকে গাটের পয়সা ( পড়েন টাকা! ) খরচ করে একাডেমিক সনদপত্র গুলো IOM থেকে সত্যায়িত করতে হবে যেটা করতে ১২০০০-১৬০০০ টাকা এবং সাথে সমস্ত ডকুমেন্টস যথাক্রমে শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হয়। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সত্যায়নের কাজ গুলো ফ্রি ফ্রি করে দেয়, কিন্তু চিকুঙ্গুনিয়া না হলে যেমন মানুষ চিকুঙ্গুনিয়ার ব্যাথা উপলব্ধি করতে পারে না ঠিক তেমনি এই দুই মন্ত্রণালায়ে না গেলে এই ফ্রি সত্যায়নের যন্ত্রণা অনুভব করা যায় না। ও ভালো কথা, একই সাথে এই ডকুমেন্টস গুলো ইতালিয়ান ভাষায় ট্রান্সলেট করতে হবে। ট্রান্সলেশন শুধুমাত্র Embassy Authorized ২ টা ট্রান্সলেটরের কাছ থেকে করতে পারবেন। নিজের টাকায় ট্রান্সলেশন করবেন কিন্তু এদের “ব্যবহার” এতই মধুর যে, এই মধু হমজ করতে আপনার অনেক দিন সময় লাগতে পারে! এত্গুলো স্টেজ পার হলেই কেবলমাত্র আপনি DOV এর জন্য আবেদন করতে পারবেন ( সাথে অবশ্যই অফার লেটার থাকতে হবে কিন্তু) । DOV হলো Declaration of Value Certificate, সহজ বাংলায় আপনি যে ইতালিতে পড়ার যোগ্য তার সমক্ষতার একটা সার্টিফিকেট যেটা ইতালিয়ান এম্বাসি আপনাকে দিবে। আপনি যদি এই Certificate না পান, তাহলে আপনার খেল এইখানেই খতম!!! আর যদি পান, তাহলে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ধরে নিলাম আপনি DOV পেয়ে গেছেন এবং ভিসার জন্য আবেদন করবেন। উল্লেখ্য, এখানে DOV এর সাথে Pre-Enrollment নামক একটা স্টেজ আছে যেটা একই সাথে আপ্লাই করতে হয়। এম্বাসি একই সাথে DOV এবং Pre-Enrollment কমপ্লিট করিয়ে দেয়।
যেহুতু আপনি DOV পেয়ে গেছেন এবং ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেহুতু আপনাকে প্রথমেই যে জিনিসটা সব থেকে বেশি ভোগান্তি দিবে, সেটা হলে হেলথ ইন্সুরেন্স। সবম্ভত, পৃথিবীর কেউই আপনাকে সঠিকভাবে বলতে পারবে না কত দিন এর হেলথ ইন্সুরেন্স আপনার লাগবে। কেউ ১ মাস, কেউ ৩ মাস এবং অনেকেই ১ বছরের হেলথ ইন্সুরেন্স করে থাকে। ১ বছরের হেলথ ইন্সুরেন্স করতে ২৫০০০-২৮০০০ টাকার মত লাগে। মজার ব্যাপার হলো, আপনার যদি ভিসা হয়ও ইতালি গিয়ে আপনার এই ১ বছরের হেলথ ইন্সুরেন্স কোন কাজেই আসবে না, সেখানে গিয়ে আবার নতুন করে হেলথ ইন্সুরেন্স করতে হবে।
Pre-Enrollment, DOV এই স্টেজ দুইটা যদিও ইতালিয়ান এম্বাসি করে কিন্তু এম্বাসিতে আপনার যাওয়ার দরকার পড়বে না। এম্বাসি এই কাজগুলো VFS Global নামক একটা থার্ড পার্টি দিয়ে করায়। ভাবছেন যাক বাঁচা গেল, এম্বাসিতে যাওয়ার ভোগান্তি করা লাগবে না, তাই না???
এবার আসা যাক VFS Global সম্পর্কে, VFS Global হলো এমন একটা সংস্থা যেখানে মানুষের মত ২ টা হাত, ২ টা পা, ২ টা চোখ এবং সর্বপরী অবিকল মানুষের মত দেখতে কিছু প্রানী বসে থাকে। তাদের চলা ফেরা, কথাবার্তা এবং কাজ কর্মে আপনি বাঘের খাঁচার মধ্যে ঢুকতে রাজি হতে পারেন, কিন্তু VFS এ যেতে চাইবেন না। VFS এ যে কি জিনিস এটা বলে বোঝানো যাবে না, শুধুমাত্র গেলেই অনুধাবন করা যাবে। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আজ পর্যন্ত যতজন VFS গিয়েছে গালি ছাড়া অন্য কিছু দেয় নাই, শুধুমাত্র ওদের স্বভাবের কারণে ।
আজ এই পর্যন্তই, বাকিটুকু ২য় পর্বে। শুভ রাত্রি।
ফেসবুক মন্তব্য
Mahedi Hasan
 
শেয়ার করুনঃ

Mahedi Hasan

স্বপ্নবাজ ও ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ। নতুন কিছু জানতে ও শিখতে ভালো লাগে। নিজে যা জানি তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। বর্তমানে জার্মানিতে পড়াশোনা করছি।আমার সম্পর্কেঃ http://www.hmahedi.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =

Upcoming Events