উচ্চশিক্ষাভিসাস্পন্সরশীপ

ইউরোপে স্টুডেন্ট ভিসায় স্পন্সরশীপের খুঁটিনাটি

Last updated on June 3rd, 2020 at 08:02 pm

ইউরোপের প্রায় সব দেশেই স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় বাঁধা হচ্ছে স্পন্সরশীপ। ব্যাংকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেখাতে হয় (ব্লক একাউন্ট, অন্যান্য একাউন্ট)। উক্ত দেশে পড়াশোনা, থাকা – খাওয়া অর্থাৎ সেখানে জীবন – ধারণের জন্য আপনার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে সেটার প্রমাণস্বরূপ এটা লাগে। এই পরিমাণটা একেক দেশে একেক রকম হতে পারে। অনেকের জন্যই স্পন্সরশীপ একটা বিশাল সমুদ্রের মত । অনেকে এটার উপযুক্ত প্রমাণ/সামর্থ্য না থাকায় অ্যাপ্লাই করতে পারে না। আর এই বাঁধা টপকানুর একটা উত্তম ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে স্পন্সরশীপ।
স্পন্সরশীপ মানে কি এবং কেন ?
ইউরোপের উক্ত দেশে যে দেশে আপনি পড়তে চাচ্ছেন সেখানে থাকাকালীন আপনার সকল খরচ (পড়াশোনা, থাকা – খাওয়া, ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচপাতি যা আপনার প্রয়োজন পড়বে) বহন করার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে কিনা সেটা যাচাই করার বা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখা । আর যিনি এই টাকার দিবেন এবং সেখানে থাকাকালীন সকল কিছুর দায় ভার যিনি নিবেন (স্পন্সর/জামিন হবেন) তাকে বলে স্পন্সরশীপ বা গ্যারান্টর বা জামিন দাতা। ভিসার পাওয়ার জন্য এটা একটা অন্যতম শর্ত।



কোন ব্যক্তি স্পন্সর হতে পারবেন ?
স্পন্সরশীপ কে হতে পারবেন সেটা নির্ভর করে আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন। কারণ একেক দেশের নিয়ম একেক রকম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ দেশেই এ বিষয়ে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যে কে হতে পারবেন স্পন্সরশীপ। যদি এ বিষয়ে স্পষ্টকরে বলা না থাকে তাহলে যে কেউ স্পন্সরশীপ হতে পারবেন। তবে উক্ত দেশের নাগরিক (যেখানে যেতে চাচ্ছেন) এবং/বা পরিবারের কেউ স্পন্সরশীপ হলে অগ্রাধিকার পাবেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্পন্সরশীপের কতটুকু সামর্থ্য বা যোগ্যতা থাকা দরকার ?
স্পন্সরশীপের মাসিক/বাৎসরিক আয় ভাল থাকতে হবে এবং আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট সচ্ছল হতে হবে। স্পন্সর দাতার আয় এমন থাকা ভাল যেন তিনি তার পারিবারিক এবং মাসিক খরচপাতি চালানোর পরেও মাসে ১০০০ – ১১০০ ইউরো সঞ্চয় দেখাতে পারেন (যদি ব্যাংক একাউন্টে রাখা অর্থের পরিমাণ সাধারণত ৮০০০ – ৯০০০ ইউরো হয়), তবে ৯০০০ ইউরো এর বেশি হলে সেক্ষেত্রে খরচপাতির পরেও সঞ্চয়ের পরিমাণ আরও বেশি হলে ভাল সেটা নির্ভর করবে ব্যাংক একাউন্টে কত দেখাতে হবে সেটার উপর। স্পন্সরশীপ যদি চাকুরীজীবী হয়ে থাকেন তাহলে তাকে সাধারণত আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ তার স্থায়ী চাকরি চুক্তি/কন্ট্রাক্ট পেপার দেখাতে হয়। চুক্তিপত্রের কপি (বা চাকরির সনদপত্র) এবং সর্বশেষ তিন থেকে ছয় মাসের বেতনের রসিদ দেখাতে হয়। আর যদি উনার নিজের ব্যাংক একাউন্টে বড় এমাউন্টের টাকা থাকে তাহলে সেটাও সাথে দিতে পারেন এবং ঐ একাউন্টের শেষ ৬ মাসের ব্যাংক বিবৃতি (ব্যাংক স্টেটমেন্ট) দিতে পারেন।
অপরদিকে স্পন্সরদাতা যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে দেখাতে হবে যে, প্রতি (১) বছরের ব্যবসায়িক লেনদেনের পরেও তার স্পন্সরশীপ হবার যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। উনার ব্যাবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স রিটার্ন পেপার অর্থাৎ ব্যাবসায়িক খাতে দেওয়া ট্যাক্স পরিশোধের রসিদ ও ব্যাবসায়িক খাতে লেনদেন করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট (ব্যাবসায়িক ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট) দিতে হবে। আর যদি উনার নিজের ব্যাংক একাউন্টে বড় এমাউন্টের টাকা থাকে তাহলে সেটাও সাথে দিতে পারেন এবং ঐ একাউন্টের শেষ ৬ মাসের ব্যাংক বিবৃতি (ব্যাংক স্টেটমেন্ট) দিতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ স্পন্সরদাতা যদি বাংলাদেশে থেকে থাকেন/অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে থাকলেও সেক্ষেত্রে তাকে এফিডেভিট করে দিতে হবে যেখানে লেখা থাকবে তার সাথে স্টুডেন্ট এর সম্পর্ক কি, স্পন্সরদাতা কি করছেন, কত টাকা মাসিক আয়, ওখানে থাকা অবস্থায় স্টুডেন্ট এর যাবতীয় খরচ ও দায়ভার উনি নিবেন ইত্যাদি। এবং শেষে স্পন্সরদাতার পাসপোর্ট নম্বর (যদি বিদেশে থাকেন/পাসপোর্ট থাকে), জাতিয় পরিচয় পত্রের নম্বর, উনার স্বাক্ষর ও তারিখ (যেদিন এফিডেভিট লিখবেন) থাকতে হবে। এফিডেভিট ১০০/৫০ টাকার স্ট্যাম্পে করতে হয়। এটা দেশের উপর নির্ভর করে। বিস্তারিত দেখে নিবেন।
অনেক স্টুডেন্টদের দেখা যায় যে, যেখানে তারা যেতে চাচ্ছেন সেখানকার কারও বাসায় তার আবাসন হিসেবে দিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। যেমনঃ
  • উনার (যার বাসায় উঠবেন) পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত ?
  • সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী বাসার স্পেস যথেষ্ট কিনা ?
  • স্টুডেন্ট থাকার মত পর্যাপ্ত স্পেস আছে কি না ?



বিঃদ্রঃ- স্পন্সর করলে স্পন্সরশীপের কিছু বিষয়ে অবগত হওয়া দরকার। আপনি (স্পন্সরদাতা) যদি কাউকে স্পন্সর করেন এবং আপনি যখন এফিডেভিট/হলফনামা করে দেন তার মানে হচ্ছে ঐ স্টুডেন্ট এর যাবতীয় দায়ভার আপনি নিয়ে নিয়েছেন। ঐ দেশে থাকা অবস্থায় যে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে সেটার দায়ভার আপনি নিবেন। তাই, স্পন্সরশীপ হওয়ার আগে বিষয়গুলো খেয়াল করা উচিত। 
ফেসবুক মন্তব্য
Mahedi Hasan
 
শেয়ার করুনঃ

Mahedi Hasan

স্বপ্নবাজ ও ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ। নতুন কিছু জানতে ও শিখতে ভালো লাগে। নিজে যা জানি তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। বর্তমানে জার্মানিতে পড়াশোনা করছি।আমার সম্পর্কেঃ http://www.hmahedi.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − 2 =

Upcoming Events