উচ্চশিক্ষাস্পেন

স্পেনে উচ্চশিক্ষা (Study in Spain)

Last updated on August 5th, 2019 at 05:39 pm

Contents 

স্পেনের পরিচিতিঃ

শিক্ষার মান ও গ্রহণযোগ্যতাঃ

বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষাঃ

ভর্তির আবেদনের যোগ্যতাঃ

টিউশন ফি, অনুদানঃ

ভিসার জন্য আবেদনঃ

পার্ট-টাইম জব ও খরচ সংক্রান্ত তথ্যঃ

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ (পি.আর)সংক্রান্ত তথ্যঃ

BE CAREFUL¡¡

 

স্পেনের পরিচিতি

Reino de España (Kingdom of Spain) স্পেন এর সাংবিধানিক নাম এবং এটি পশ্চিম ইউরোপের ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত একটি সেঞ্জেন দেশ। মাদ্রিদ রাজধানী স্পেনের বৃহত্তম শহর এবং প্রধান সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। স্পেনের প্রধান প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বার্সেলোনা,বালেনছিয়া,ছারাগোছা,মুরছিয়া,আলিকান্তে,সেবিইয়া, মালাগা,বিক,বিলবাউ,বাইয়াডোলিড ইত্যাদি অন্যতম। ৫ লক্ষ ৫ হাজার ৯ শ বর্গ কিলোমিটার (১৯৪,৮৯৭ বর্গ মাইল) আয়তন নিয়ে স্পেন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ৫১তম দেশ| দেশটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরীয় উপদ্বীপে অবস্থিত। স্পেনের পশ্চিম দিকে পর্তুগাল এবং উত্তর-পূর্ব দিকে ফ্রান্স ও অ্যান্ডোরার সঙ্গে সংলগ্ন। দেশটির উত্তরে বিস্কাই উপসাগর,দক্ষিণ দিকে জিব্রাল্টার প্রণালী,প্রণালীর দক্ষিণে মরক্কো,পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আটলান্টিক মহাসাগর। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভূমধ্যসাগর। স্পেনের সমুদ্র সীমা প্রায় ৭ হাজার ৮০০ কিলোমিটার লম্বা। দেশের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট তেইদে ৩,৭১৮ মিটার।



স্পেনের রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থায় স্পেনের রাজা হলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হলেন একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকারি নেতা। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদের দুইটি কক্ষের হাতে ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়নকারী বিভাগ থেকে স্বাধীন।

 

শিক্ষার মান ও গ্রহণযোগ্যতা

স্পেনের শিক্ষার মান খুবই উন্নত এবং এর ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। স্পেনে অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেগুলো রেঙ্কিং এ অনেক এগিয়ে। এখানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারনত স্প্যানিশ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয় আর সারা স্পেনের কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। তাই স্পেনে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলে স্প্যানিশ ভাষার উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হয়। যাদের মাতৃভাষা স্প্যানিশ নয় তাদের সাধারনত স্প্যানিশে B1/B2 লেভেল সম্পন্ন করা লাগে স্নাতক আর স্নাকোত্তর কোর্সে পড়াশোনা করার জন্য।

 

স্পেনের ভাষা

স্প্যানিশ বিশ্বের প্রায় ২৮টি  দেশের মাতৃ ভাষা। স্পেনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোকের মাতৃভাষা স্প্যানিশ (español এস্পানিওল্‌ বা castellano কাস্তেইয়ানো) এবং এটা স্পেনের সরকারি ভাষা। স্পেনে প্রধানত ৪টা প্রচলিত, ভাষাগুলো হল- স্প্যানিশ,কাতালান,বাস্ক বা এউসকেরা এবং গালিছিয়ান। কাতালুনিয়াতে (Cataluña) কাতালান (català কাতালা) প্রচলিত। কাতালা স্পেনের প্রায় ২০% লোকের মাতৃভাষা এবং কাতালুনিয়ার রাজধানী হচ্ছে বার্সেলোনা। বাস্ক (País Vasco) প্রদেশগুলিতে বাস্ক ভাষা (euskera এউসকেরা),গালিছিয়াতে (Galicia গালিছিয়া)প্রচলিত গালিছিয়ান (gallego গাইয়েগো) প্রায় ৮% স্পেনের নাগরিকের মাতৃভাষা। এই তিনটি ভাষাকে আঞ্চলিক সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে আরাগোনীয়ান (aragonés আরাগোনেস্‌), আস্তুরীয়ন(Asturian আস্তুরিয়ান) এবং এক্সত্রেমাদুরীয়ান (Extremadura এক্সত্রেমাদুরা) ভাষা। এছাড়াও জিপসি বা রোমানিভাষী একটি বড় সম্প্রদায় আছে।

আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে স্প্যানিশ, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

 

বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা

বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার জন্য কিছু ইন্সিটিউট রয়েছে বিশেষ করে আধুনিক ভাষা ইন্সিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ স্প্যানিশ ডিপার্টমেন্টে জুনিয়র এবং সিনিয়র কোর্স নামে ১বছর করে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে যা সাধারনত প্রতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। তাছাড়া ঢাকার আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষাদান করা হয় যেমন ব্রাক ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি।

এখানে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত কিছু লিংক দেওয়া হল যেখানে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় সম্বন্ধে জানা যাবে।

https://iml.du.ac.bd/

https://www.facebook.com/catedra.inditex.du/

https://elebengali.wordpress.com

https://elebangla.wordpress.com

 


স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা,স্নাতক,স্নাতকোত্তর ও গবেষণামূলক/PhD কোর্সে ভর্তির আবেদন বছরের বিভিন্ন সময় গ্রহন করা হয়। স্পেনে সাধারনত প্রতিবছর অক্টোবর থেকে শিক্ষাবছর শুরু হয়। তাই প্রতিবছর অক্টোবরের আগেই বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। ভর্তির আবেদনের সময় মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে শুরু হয়।

স্পেনে তিন ধাপে ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১ম ধাপে স্নাতক কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত বছরের শুরুর(ফেব্রুয়ারী-জুন) দিকে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। স্নাতক কোর্স সাধারনত ২৪০ ক্রেডিট হয়ে থাকে যা ৪ বছর মেয়াদী। এখানে স্নাতক কোর্সের একটি বিষয় আছে আর তা হল  স্নাতক  ১ম বর্ষ শেষ করার পর একজন ছাত্র বা ছাত্রী একসাথে  ডাবল ডিগ্রি বা ডাবল স্নাতক কোর্স করতে পারেন,  এই ক্ষেত্রে ১ম স্নাতক কোর্সের সাথে ২য় স্নাতক কোর্সের বিষয়ের মিল থাকতে হবে, যেমন- কেউ বিবিএ কোর্স এ ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ১ম বর্ষ শেষ করার পর ফাইনান্স বা একাউন্টিং অথবা বিবিএ এর সাথে সামঞ্জস্য অন্য বিষয় নিয়ে একসাথে ডাবল স্নাতক কোর্স বা ডিগ্রিতে পড়তে পারবে আর তখন অতিরিক্ত আরো ৪০-৫০ ক্রেডিট নিতে হবে।

২য় ধাপে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত বছরের মাঝখানের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) দিকে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। স্নাতকোত্তর কোর্স সাধারনত ৬০-১২০ ক্রেডিট হয়ে থাকে যা ১-২ বছর মেয়াদী। স্পেনে ২-ধরনের স্নাতকোত্তর কোর্স আছে, একটি অফিসিয়াল মাস্টার্স যা স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমদিত এবং আরেকটি মাস্টার্স কোর্স হল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মাস্টার্স যা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অনুমোদন করে থাকে।

৩য় ধাপে গবেষণামূলক/PhD কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত এপ্রিল-অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। গবেষণামূলক/PhD কোর্স সাধারনত 8-৫ বছর মেয়াদী।

 

ভর্তির আবেদনের যোগ্যতা

স্নাতক কোর্সে স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১২বছরের শিক্ষা সনদ থাকতে হয় আর কোর্স যে ভাষায় শিক্ষাদান করা হবে সেই ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। সরাসরি স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য স্প্যানিশ ভাষায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়। তবে কেউ ১বছরের প্রি-স্নাতক কোর্সে সরাসরি ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে স্নাতক কোর্সে পড়াশোনা করতে পারেন। ইংরেজি মাধ্যমে পরতে হলে সাধারনত IELTS এ 5.5/6.0 – 7.0 স্কোর লাগে আর স্প্যানিশ মাধ্যমে পরতে হলে B1/B2 or DELE(Diploma of Spanish as a foreign Language, Certificate Issued by Cervantes Institute, Spain) DELE Intermediate or DELE B1/B2 লাগে।

স্নাতকোত্তর কোর্সে স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১৬বছরের শিক্ষা সনদ থাকতে হয় আর কোর্স যে ভাষায় শিক্ষাদান করা হবে সেই ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমে পরতে হলে সাধারনত IELTS এ 5.5/6.0 – 7. 5 স্কোর লাগে আর স্প্যানিশ মাধ্যমে পরতে হলে B2/C1 or DELE(Diploma of Spanish as a foreign Language, Certificate Issued by Cervantes Institute, Spain) DELE B2/C1-C2 লাগে।

ডক্টরেট বা গবেষণা প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য ১৬বছরের শিক্ষা সনদ থাকতে হয় তবে যেই বিষয়ের উপর ডক্টরেট বা গবেষণা করা হবে সেই ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর কোর্সে কোর্স ফাইনাল ওয়ার্ক হিসাবে থিসিস থাকতে হবে।

 

স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটঃ

www.4icu.org/es

 

স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

– বিশ্ববিদ্যালয়ে ONLINE আবেদন ফর্ম এবং নিচের সব ডকুমেন্ট (কোর্স ভেদে) ONLINE এ Upload করতে হবে।

– এসএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট।

– এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট।

– ব্যাচেলর ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট (মাস্টার্স এ আবেদন করতে)।

– নিজ   বিশ্ববিদ্যালয়/বিভাগীয়   প্রধান   থেকে   একটা   সার্টিফিকেট    নিতে    হবে   যেখানে   উল্লেখ  থাকবে  যে   সংশ্লিষ্ট ছাত্র/ছাত্রী  নিজ  দেশে  সমাপ্তক্রিত  স্নাতক  কোর্স  দ্বারা  স্নাতকোত্তর  কোর্সে  অধ্যায়নের  যোগ্যতা  রাখে   (মাস্টার্স এ আবেদন এর ক্ষেত্রে)।

– মাস্টার্স ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট (পিএইচডি এর আবেদনের জন্য)।

– পাসপোর্ট কপি।

– মোটিভেশন লেটার।

– সিভি।

– কিছু   বিশ্ববিদ্যালয়  বিদেশী  ছাত্রছাত্রীদের   স্নাতকোত্তর  কোর্সে  ভর্তির  জন্য  সর্বশেষ বা স্নাতক পরীক্ষার নম্বরপত্র স্পেনের শিক্ষাব্যবস্থা সমতুল্য স্কেলে পরিমাপ  করে  তা  ONLINE এ ভর্তির আবেদনের সাথেই জমা দিতে হয়।   এক্ষেত্রে  নিচের লিংকে  গিয়ে  সর্বশেষ পরীক্ষা  বা  স্নাতক পরীক্ষার  প্রাপ্ত  নম্বর  ও  বিষয়সমূহ  ONLINE  এ  ফর্ম  এর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পুরন   করে স্পেনের  শিক্ষাব্যবস্থায়   সমতুল্য  স্কেলে  পরিমাপ  করে  সাথে  সাথে  তা ডাউনলোড করা যায়।

http://www.mecd.gob.es/mecd/servicios-al-ciudadano mecd/catalogo/general/educacion/203615/ficha.html

– ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট, যেমনঃ IELTS/TOEFL (ইংরেজি মাধ্যমের জন্য), DELE Intermediate or DELE B1/B2

ONLINE এ স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তির  আবেদনের  সময় সর্বশেষ শিক্ষা সমাপ্তির সার্টিফিকেট (যেই  কোর্সে  আবেদন করা  হবে  সেই  কোর্সের  ভর্তি  যোগ্যতার) Homologation/ Equivalency  এর   জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের  নিদিষ্ট  ফরমে আবেনদ  করতে  হয়  ভিসি বরাবর অথবা স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ও আবেদন করা যায় এক্ষেত্রে একট ফি প্রদান করতে হয়। Homologation/Equivalency ভর্তির পর  স্পেনে আসার পরও করা যায় ।

ONLINE এ   ভর্তির  আবেদন  ফি  (ONLINE এ  ভর্তির আবেদন ফি ভিসা কার্ড অথবা ব্যাংক ত্রান্সফার এর মাধ্যমে জমা দিতে হয়)।

– পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

Note- স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেই কোর্সে ভর্তির আবেদন করা হবে সেই কোর্সের ভর্তির যোগ্যতার সর্বশেষ শিক্ষা সনদ, ত্রান্সক্রিপট বাংলাদেশে অবস্থিত নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর সবশেষে ঢাকায় অবস্থিত স্পেনের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়। সত্যায়িত কপি ONLINE এ ভর্তির আবেদনের সাথে জমা দেওয়া ছাড়াও সত্যায়িত ফটোকপি কপি ভর্তির আবেদন এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ডাকযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। স্পেনের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ONLINE এ ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। ONLINE এ ভর্তির আবেদন করার সময় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ONLINE এ জমা দিতে হয়। এর পরে ONLINE আবেদনের প্রিন্ট কপির সাথে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত ঠিকানা বরাবর নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই পৌছাতে হবে। এর পরে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১-২ মাসের মধ্যেই ভর্তির ফলাফল ই-মেইলের জানিয়ে দেওয়া হয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে ভর্তির ফলাফল জানা যাবে এবং ভর্তির মূল চিঠি আবেদনকারীর দেওয়া ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়  ১-২ সপ্তাহের মধ্যে। ভর্তি হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তির আসন সংরক্ষনের জন্য একটি নিদিষ্ট পরিমান অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত ব্যাংক একাউন্ট এ অর্থ জমা দিতে হয় (ভর্তির আসন সংরক্ষনের জন্য সাধারনত ১০-১৫ দিন সময় দেওয়া হয়, যদি এই সময়ের মধ্যে অর্থ জমা না দেওয়া যায় তা হলে ভর্তি বাতিল হয়ে যায়)। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত ব্যাংক একাউন্ট এ অর্থ জমা হয়ে গেলে ছাত্রের যোগাযোগের ঠিকানায় ভর্তির চিঠি আর ভিসা সংক্রান্ত কাগজ পাঠিয়ে দেওয়া হয়।



বিঃদ্রঃ বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ডকুমেন্টস ও যোগ্যতাসমূহ ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় ভর্তির জন্য ONLINE / SKYPE ইন্টারভিউ নেওয়া হয়।

 

টিউশন ফি, অনুদান

স্পেনে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোর্সভেদে টিউশন ফি ভিন্ন হয়ে থাকে। এখানে সাধারনত প্রতিক্রেডিট হিসাবে টিউশন ফি ধরা হয়। ১ ক্রেডিট টিউশন ফি নন-ইউরোপিয়ান ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে ৫৫-৮০ ইউরো আর স্থানীয় ও ইউরোপিয়ান ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৩০-৫৫ ইউরোর মধ্যে। তবে কিছু কিছু প্রোগ্রাম/কোর্স/ইউনিভার্সিটি তে টিউশন ফি আরও কম বা বেশি হতে পারে।

স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিজস্ব আর্থিক অনুদান থাকে যা বিভিন্ন কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অনুদান হিসাবে দেওয়া হয় পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে এই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। নিচে কিছু লিংক দেওয়া হল যা আর্থিক অনুদান পেতে সহায়তা করবে।

http://www.aecid.es/ES/becas-y-lectorados/convocatorias-maec-aecid

http://eacea.ec.europa.eu/erasmus_mundus/funding/scholarships_students_academics_en.php

 

ভিসা সংক্রান্ত তথ্য

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:

– বৈধ পাসপোর্ট।

– পূরণকৃত Visa অ্যাপ্লিকেশান ফর্ম।

– পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

– বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিঠি ও টিউশন পাঠানোর কাগজ।

– ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট।

– ফ্লাইট বুকিং টিকেট(এটা করতে কোন টাকা লাগে না, শুধু বুকিং দিবেন।

– ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি (স্কলারশিপ প্রাপ্তদের কোন ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি দিতে হয় না)।

– হেলথ ইস্যুরেন্স(যতদিন এর কোর্স ততদিনের হেলথ ইস্যুরেন্স করতে হবে)।

– সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস ।

– স্কলারশিপ লেটার(যদি পেয়ে থাকেন)।

– ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সল্ভেন্সি (যিনি আপনার সকল খরচ বহন করবেন তার অর্থাৎ স্পন্সরের)

– হাউজিং সার্টিফিকেট/ডকুমেন্ট(স্পেনে  আসার  পর   যেখানে    অবস্থান    করবে  সেই   জায়গার  ঠিকানা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন স্থানের ঠিকানা যেখানে ছাত্রছাত্রী পড়াকালীন সময়ে অবস্থান করবে।

অতিরিক্ত ডকুমেন্টস:

– ট্রেনিং সার্টিফিকেট (যদি লাগে)।

– কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি লাগে)।

 

ভিসার জন্য আবেদন

১। সকল   প্রয়োজনীয়    ডকুমেন্টস    সঠিকভাবে   তৈরি   হয়ে   গেলে কোর্স শুরুর ২-১ মাস আগেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় ঢাকায় অবস্থিত স্পেনের দুতাবাসে।

২। এমব্যাসির এপোয়েন্টমেন্ট এর জন্যে স্পেনের ঢাকায় নিজুক্ত দুতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়।

http://www.exteriores.gob.es/embajadas/dhaka/es/Paginas/inicio.aspx

৩। এপোয়েন্টমেন্ট এর দিন সকল ডকুমেন্টস নিয়ে এমব্যাসিতে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে হয়।

৪। এপোয়েন্টমেন্ট এর   দিন  সকল ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে ভিসা ফি ব্যাংকে জমা দিতে বলে ভিসার আবেদন গ্রহন করা হয় এবং ঐ দিন অথবা অন্য দিন ভিসা ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।

** ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ৩ সপ্তাহ সময় লাগে।

 

পার্ট-টাইম জব ও খরচ সংক্রান্ত তথ্য

স্পেনের আইন অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। কিন্তু কাজ করে টিউশন ফি ও নিজের খরচ চালানো সম্ভব নয়। স্পেনে ৩বছর থাকার পর Temporary Resident Permit এর জন্য আবেদন করা যায় কিছু সর্তপূরণ সাপেক্ষে। স্পেনে থাকা-খাওয়া বাবদ মাসিক খরচ প্রায় ৪০০-৫০০ ইউরো, এটা নির্ভর করে শহর, ব্যক্তির লাইফ স্টাইল এর উপর।

 

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ (পি.আর)

গত সেপ্টেম্বর ২০১৮ সাল থেকে স্পেনে একটি নতুন ইমিগ্রেসন আইন অনুমোদন করা হয়েছে, এই আইনের অধীনে স্পেনে উচ্চশিক্ষারত বিদেশী শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা সমাপ্তির পর স্পেনে একটি চাকরি খোঁজার জন্য অথবা নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রকল্প তৈরি/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে সর্বোচ্চ ১২-মাস স্পেনে থাকার অনুমতি পাবেন। এই আইনের আগে স্পেনে উচ্চশিক্ষারত সকল বিদেশী শিক্ষার্থীকে তাদের উচ্চশিক্ষা সমাপ্তির পরেই স্পেনে থেকে চলে যেতে হত কিন্তু বর্তমান আইনের অধীনে একজন বিদেশী শিক্ষার্থী তার উচ্চশিক্ষা স্পেনে সমাপ্তির পরে কিছু শর্ত পুরন সাপেক্ষে স্পেনে বৈধভাবে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং প্রচালনা অথবা স্পেনে চাকুরী করার সুযোগ পাবে।

স্পেনে উচ্চশিক্ষা শেষ করার ৬০-দিন আগে বা ৯০-দিন পরে আপনার উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত স্পেনে কোন চাকুরী খুঁজে পেতে অথবা নিজের ব্যবসা প্রকল্প শুরু করার জন্য আবেদন করা যাবে যা আপনাকে সর্বাধিক ১২ মাস থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। এই জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো একজন আবেদনকারীকে পুরন করতে হবে :

১. স্পেনে আপনি যেই কোর্স করতে আসবেন সেই কোর্স পাঠ্যক্রম সাফল্যেরসহিত শেষ করতে হবে। যারা স্নাতক/ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করবে  তাদেরকে নুন্যতম , স্নাকত্তর/মাস্টার্স ডিগ্রি হলে আর  PhD ডিগ্রি হলে পয়েন্ট পেতে হবে।  এখানে উল্লেখ্য যে স্পেনে সকল শিক্ষার ফলাফলকে ১০ পয়েন্ট ধরা হয় এবং নুন্নতম পয়েন্ট কে পাশ নম্বর ধরা হয় আর ৫ এর নিচে ফেল বা অকৃতকার্য বিবেচনা করা হয়।

২. স্পেনের স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে যা নিজের স্বাস্থ্য চিকিৎসা গ্রহনের জন্য।

৩. স্পেনে থেকে চাকুরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের যাবতীয় খরচ মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য বা অর্থনৈতিক সম্পদ প্রমাণ করতে হবে।

৪. আবেদন ফি।

একটানা ৫ বছর বৈধভাবে স্পেনে থাকার পর স্থায়ী বসবাসের (পি.আর) জন্যে আবেদন করতে পারবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে আরও কিছু শর্ত রয়েছে।



স্প্যানিশ আইন অনুযায়ী একজন অভিবাসী স্পেনে বৈধভাবে একটানা ১০-বছর অতিবাহিত করার পর স্প্যানিশ নাগরিকত্তের জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

BE CAREFUL- স্পেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে চা-শপ (টংদোকান, 2nd/3rd Party institution) এর মতো অনেক কলেজ/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা মূলত  ইন্ডিয়ান, রাশিয়ান ও অন্যান্য বিদেশীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত, এরা ইউরোপের নামী-দামী শহরে বড় বড় কমার্শিয়াল বিল্ডিং-এ ছোট ১/২টা ফ্লোর নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়েছে আর এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা তাদের Web-সাইটে পুরো বিল্ডিং এর ছবি, বিভিন্ন বিষয় অনেক চাকচিক্য করে তৃতীয়বিশ্বের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে মোটা অংকের পয়সা কামানোর জন্য। পয়সা ইনকাম করাটাই এদের একমাত্র আসল উদ্দেশ্য, এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে অনেকে ভিসা পায় না আর ভর্তি ফিসও এরা ফেরত দেয় না নানা রকম  শর্ত আর সময় ক্ষেপণ করে। তাছাড়া এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান Black Listed হওয়ার পরেও আদালত থেকে সময় নিয়ে নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে অনেক দিন। বাংলাদেশে সহ অনেক তৃতীয়বিশ্বের দেশে এরা বিভিন্ন শিক্ষা মেলায় স্পট এডমিশন দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে তাই কোথাও কোন কলেজে ভর্তি না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হলে ভিসা আর শিক্ষা  ২-টাই অর্জন করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

 

শুভকামনায়,
এম. ই. হাসান রাজ
বার্সেলোনা, স্পেন

 

ফেসবুক মন্তব্য
 
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + 13 =

Upcoming Events